যানবাহন আমাদের প্রতিনিয়ত নিত্যসঙ্গী, কেউ আমরা যানবাহন ব্যতীত রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারি না, তাই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ অনুমতি সাপেক্ষে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে আমরা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে। বাস, কার কিংবা মোটরসাইকেল। তবে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে ফেললে আপনি সেই যানবাহনটি চালাতে বা ড্রাইভ করতে পারবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত আমরা যে কোনো যানবাহন চলাচল এবং পরিবহন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ ।
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পন্ন করতে পারি। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা সকল আবেদন প্রক্রিয়া করতে পারি ঘরে বসে খুব সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার উপায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং কত টাকা লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
Contents
ড্রাইভিং লাইসেন্স
“লাইসেন্স” অর্থ নির্দিষ্ট কোন একটি অভিজ্ঞতা যা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করে দলিল প্রদান করেন তাকে লাইসেন্স বলে।
“ড্রাইভিং লাইসেন্স” অর্থ নির্দিষ্ট কোন একটি মোটরযান যা কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর মোটরযান চালানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দ্বারা প্রদত্ত দলিলকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা
মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ৩ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি গাড়ি চালানোর জন্য তাকে কর্তৃত্বদান করে প্রদত্ত কার্যকর একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারণ না করে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোন স্থানে কোন মোটরযান চালাবে না এবং কোন ব্যক্তি তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে নির্দিষ্টরূপে তদ্রুপ অধিকার প্রদত্ত না হলে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালাবে না অথবা কোন পরিবহনযান চালাবে না সে জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।
মোটরযান লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ মোতাবেক লাইসেন্স ৫ প্রকার। যেমনঃ
- শিক্ষানবীশ লাইসেন্স
- পেশাদার লাইসেন্স
- অপেশাদার লাইসেন্স
- পি.এস. ভি লাইসেন্স
- ইনস্ট্রাকটর লাইসেন্স
আমরা শুধুমাত্র শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আলোচনা করব।
আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। আপনাকে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। মোটর সাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ হতে হবে। বিআরটিএ এর সূত্র মত্র পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২০ বছর এবং অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম এবং ধাপসমূহ
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া :
গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে (bsp.brta.gov.bd)-এর মধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সাথে সাথেই সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এরপর ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় প্রমাণক, তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষনবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন ও রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট। ডাউনলোড ঠিকানাঃ http://goo.gl/Vyhlha
২। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৩। নির্ধারিত ফী, ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে (আপনার নিকটস্থ ব্যাংক এর তালিকা
–তে পাওয়া যাবে)
জমাদানের রশিদ।
৪। সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতিঃ
প্রথমে ইন্টারনেট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে অথবা স্থানীয় বিআরটিএ এর অফিস থেকে সংগ্রহ করে আবেদনপত্র পূরন করুন। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক সংযুক্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট সত্যায়িত করুন। সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ফর্মের নির্ধারিত স্থানে স্ট্যাপলার দিয়ে সংযুক্ত করুন। ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিকটস্থ নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে ৩৪৫।- টাকা আপনার নামে (ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম সনদ/পাসপোর্টে যেভাবে লিখা আছে) জমা দিন। এবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এবং ব্যাংকে টাকা জমাদানের রশিদ ফরমের সাথে স্ট্যাপলার দিয়ে সংযুক্ত করে নিকটস্থ বিআরটিএ (http://www.brta.gov.bd/ থেকে ব্র্যাঞ্চের ঠিকানা দেখে নিন) অফিসে গিয়ে সকাল ৯.০০ টা হতে বেলা ১.০০ টার মধ্যে আবেদন ফরম জমা দিন। ফরম জমা দেওয়ার লাইন একেবারে ছোট। সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। ফরম জমা দিলে আপনার নামে লার্নার বা শিক্ষনবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হবে, যা আপনি পরবর্তী দিন সংগ্রহ করতে পারবেন।
ড্রাইভিং পরীক্ষাঃ
লার্নার বা শিক্ষনবীশ ড্রাইভিং কার্ডে পরীক্ষার স্থান, তারিখ ও সময় দেয়া থাকবে। সাধারণত ২-৩ মাস পরের সময় দেয়া থাকে। তবে আপনি এর মধ্যে আপনার সুবিধামত সময়েও পরীক্ষা দিতে পারেন। সেক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা স্থানে খোঁজখবর নিয়ে যেকোন পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয়ে আপনার নাম ঐ তারিখে ইস্যু করতে হবে। নির্ধারিত তারিখে আবেদনকারীকে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলোতে অংশ গ্রহণ করতে হবে।
ক. লিখিত পরীক্ষা
খ. মৌখিক পরীক্ষা
গ. ব্যবহারিক পরীক্ষা
ক. লিখিত পরীক্ষাঃ নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হয়ে সকাল ৯.০০-১২.০০ টার মধ্যে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। সময়ঃ ২০ মিনিট
পূর্ণমানঃ ২০ (সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ ৬ নম্বর, নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নঃ ৮ নম্বর, ইঞ্জিন মেকানিজমঃ ৬ নম্বর)
পাশ নম্বরঃ ১২ তবে ইঞ্জিন মেকানিজম এ অবশ্যই ২ পেতে হবে।
খ. মৌখিক পরীক্ষাঃ উক্ত দিনেই দুপুর ১২.০০-৪.০০ টার মধ্যে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।
গ. ব্যবহারিক পরীক্ষাঃ উক্ত দিনেই দুপুর ২.০০-৫.০০ টার মধ্যে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় মূলত মোটর সাইকেলের উপর আপনার কন্ট্রোল।
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্র নিয়ে আবার বিআরটিএ অফিসে যেতে হবে।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন। ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://goo.gl/HtFh5F
২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট। ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://goo.gl/9azK7F
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফী (অপেশাদার- ২৩০০/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৫। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৬। লার্নার বা শিক্ষনবীশ কার্ড
এরপর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করতে হবে। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে আপনাকে ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড নিয়ে আসতে হবে। ব্যস! হয়ে গেল ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড।
ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়েছে কিনা কিভাবে জানবো?
আপনি নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন৷ আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুতের বর্তমান অবস্থা জানতে নিচের ধাপগুলো অনুসরন করুনঃ (১) মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে “DL রেফারেন্স নম্বর” টাইপ করুন; (২) মেসেজটি 6969 নম্বরে পাঠিয়ে দিন; (৩) ফিরতি মেসেজে চিপযুক্ত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুতের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। [ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বায়ো মেট্রিক্স সম্পন্ন করার পর বিআরটিএ থেকে যে এ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দেওয়া হয় তাতে রেফারেন্স নাম্বার উল্লেখ থাকে।] উদাহরণ: Type: DL DM121590 & Send to 6969 গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা: ১। রেফারেন্স নম্বর এ যদি কোনো ডেশ (“-”) থাকলে তা বাদ দিতে হবে। কিন্তু যদি স্ল্যাশ (“/”) থাকে তবে তা দিতে হবে।
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায় কিভাবে?
বর্তমানে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর সঠিকতা যাচাই করা যাবে। আপনার মোবাইলের মেসেজ আপশনে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাইয়ের জন্য DL<space>Driving License Number লিখে 01552146222 নম্বরে মেসজ পাঠিয়ে দিলেই ২-৫ মিনিটের মধ্যেই ফিরতি মেসেজে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তথ্য পেয়ে যাবেন । বর্তমানে শুধু মাত্র স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করা যাবে ।